কাঁচা হলুদ এবং নিম পাতার গুনাগুন
গ্রামে একটি কথা প্রচলিত আছে, নিম গাছ যে বাড়িতে থাকে সে বাড়িতে ডাক্তার বসবাস করে। কাঁচা হলুদ আমাদের হজম শক্তি বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে কাঁচা হলুদে অনেক পরিমাণে আয়রন থাকে। কাঁচা হলুদ এবং নিমপাতা শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
শুধু তাই কি কাঁচা হলুদে আছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা রাখার বিশাল সমাহার। নিমপাতা
কে ক্যান্সারের ঔষধ বলা হয়ে থাকে। প্রতিদিন কাঁচা হলুদ এবং নিম পাতায় একসঙ্গে
খেলে ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। চলুন আজ কাঁচা হলুদ এবং নিমপাতা
সম্পর্কে জেনে নিন।
পেজ সূচিপত্রঃ কাঁচা হলুদ ও নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
কাঁচা হলুদের উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রাচীনকাল থেকে হলুদ আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র মতে মহা ঔষধি। হলুদ বলতে রান্না করার হলুদ বা পাউডার নয়। প্রাকৃতিকভাবে অর্থাৎ কাঁচা হলুদ আপনি প্রতি দিন সকালে এক টুকরা করে খেতে পারেন।ক্যান্সার নামক ব্যাধি থেকে মুক্তি পাবেন শুধু তাই কি কাঁচা হলুদ খেলে বিভিন্ন ছোট বড় রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। কাঁচা হলুদ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এমন কিছু রোগ সমূহ নিয়ে আলোচনা করা হলো।
ক্যান্সার প্রতিরোধে হলুদঃ ক্যান্সার প্রতিরোধে হলুদ এর অবদান অপরসীম। আমরা সবাই জানি, ক্যান্সার মরণব্যাধি রোগ। আমরা সকলেই চাই আমাদের শরীরে ক্যান্সার রোগ বাসা না বাধে। তাই ক্যান্সারের মতো মরনব্যাধি বা প্রাণঘাতিক রোগ থেকে মুক্তি দিতে হলুদের কোন বিকল্প নেই। আপনি যদি এই মরণ রোগ থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে প্রতিদিন রুটিনের এক টুকরা কাঁচা হলুদ খেতে পারেন।
হার্টের জন্য হলুদঃ বর্তমান অসুখ হবার জন্য কোন বয়স লাগে না। আজকাল কম বয়স থেকেই সবাই প্রায় হার্টের সমস্যায় ভুগছে।হলুদে থাকা কিউকারমিন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং আপনার হার্টকে সুস্থ রাখতে হলুদ একাই যথেষ্ট।আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আপনি প্রতিদিন এক টুকরা কাঁচা হলুদ গ্রহণ করতে পারেন। তাই আপনি প্রতিদিন সকালে এক টুকরো করে হলুদ খাওয়ার অভ্যাস করুন।
কাঁচা হলুদের অপকারীতা
আমরা প্রতিদিন কাঁচা হলুদকে নানা ভাবে সেবন করে থাকি।যেমন -কেউ চায়ের সাথে কেউবা দুধের সঙ্গে।আমাদের একটা দিকে খেয়াল রাখতে হবে বেশি পরিমাণের কাঁচা হলুদ না খাওয়া। আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে মাত্রা অতিরিক্ত কোন কিছু না খাওয়া প্রয়োজন।আপনি যদি বেশি পরিমানে হলুদ খেয়ে থাকেন তাহলে এই সমস্যা এগুলো হবে।
- হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাবে
- আয়রনের ঘাটতি দেখা দিবে
- ত্বকের সমস্যা ও মাথা ধরা দেখা দিবে
- লিভার বড় হয়ে যাবে
- প্রদাহ জনিত সমস্যা
আপনি অতিরিক্ত মাত্রায় কাঁচা হলুদ খেলে এগুলো সম্মুখীন হবেন। এছাড়া কাঁচা হলুদের কোন অপকারিতা বা সাইড ইফেক্ট নেই। এজন্য আপনাকে কাঁচা হলুদ খাওয়ার আগে সচেতন হতে হবে। তাহলে এগুলোর সম্মুখীন আপনি হবেন না। অতিরিক্ত হলুদ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
প্রতিদিন কতটুকু নিম পাতা খাওয়া উচিত
প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ টি করে নিম পাতা খেতে পারলে ভালো। নিমপাতা একটি সর্বগুণ সম্পন্ন প্রাকৃতিক ঔষধ যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে ভূমিকা পালন করে। আমাদের শরীরে জীবাণু ধ্বংস করার জন্য নিম পাতার কোন জুড়ি হয় না। আপনি যদি প্রতিদিন একটি করে নিম ক্যাপসুল খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরে অবস্থানকৃত জীবাণু সমূহ ধ্বংস হবে।
নিম পাতা তিতা হওয়ার জন্য কেউ অতটা খেতে অভ্যস্ত নয়। তবে আপনি যদি প্রতিদিন নিমপাতা খেতে পারেন তবে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। যাদের সুগার লেভেল বা সুগার রয়েছে তাদের জন্য নিমপাতা অন্যতম একটি ঔষধ। তাই আপনি যদি প্রতিদিন খাবার রুটিনে সকালে নিমপাতা খেতে পারেন তাহলে আপনার সুগার লেভেল কমে যাবে।
চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার
চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার করে আমরা খুব সহজেই চর্মরোগ থেকে মুক্তি পেতে পারি। আমরা সকলেই জানি নিমপাতা একটি প্রাকৃতিক জীবাণু নাশক বা মহা ঔষধ। নিম পাতায় রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল ও আন্টিড্রাইক্স যা আমাদের ত্বকের ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে। চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহারের জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে নিম পাতা সংরক্ষণ করতে হবে।
তারপরে কিছু পরিমাণ গরম জল দিয়ে নিমপাতা কে সিদ্ধ করে নিতে হবে এরপর সিদ্ধ করা নিম পাতর গরম জল দিয়ে গোসল করতে হবে । এতে আপনার চর্মরোগ থেকে মুক্তির আশা অনুভব করতে পারবেন। প্রতিদিন আপনি যদি এই প্রথা অবলম্বন করেন তাহলে খুব শীঘ্রই আপনি সুস্থতার মুখ দেখতে পারবেন।
নিম পাতা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
নিম পাতা এবং হলুদ উভয় ত্বকের একটা এক্সট্রা যত্নের কৌশল। নিম পাতার রস প্রতিদিন আমাদের ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বক ফর্সা এবং উজ্জ্বল হয়। আমাদের ত্বকে ফিরিয়ে আনে উজ্জ্বল জিল্লা যা সুন্দর এবং জীবাণুমুক্ত রূপ নেয়। আমরা বেশিরভাগ এখন কসমেটিক্স সামগ্রী মুখে ব্যবহার করে থাকি যা আমাদের ত্বকের জন্য সহনশীল নয়।
আমরা যদি ঘরোয়া পদ্ধতিতে বা সঠিক কসমেটিকস সামগ্রী ব্যবহার করি তাহলে আমাদের ত্বক সুন্দর্য এবং সুস্থ থাকবে। এর জন্য আমাদের দরকার গোড়া থেকে ত্বকে ফর্সা এবং সুন্দর রাখার। এর জন্য নিম পাতার কোন জুড়ি হয় না প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদিক রিসার্চ এর মাধ্যমে নিমপাতা কে ব্যবহার করেছে অনেক উপায়। নিম ফেসওয়াশ এবং নিম পাতার রস ব্যবহারে সুন্দর ত্বক পাওয়া সম্ভব।
নিম পাতা চুলে দিলে কি হয়
মূলত নিমপাতা একটি আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রমতে সর্বগুণসম্পন্ন এবং জীবাণুনাশক ঔষধ হিসেবে বিবেচনায় বিবেচিত। আমাদের শরীরে চুলকানি বা রেশ তৈরি হয় এমনটি আমাদের মাথাতেও হয়ে থাকে। অনেকের মাথায় চুলকানি থাকে এতে শ্যাম্পু বা কন্ডিশনার দিলেও যেতে চায় না এর জন্য ঘরোয়া ভাবে নিম পাতা চুলে বেটে দিলে মাথার চুলকানি দূর হয়।
এছাড়াও অতিরিক্ত চুল পড়া, চুল শক্ত হওয়া, নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে নিম
পাতা। শুধু তাই কি নিমগত যেমন চুলের জন্য ভালো তেমনি ত্বকের জন্য ভালো। নিম পাতার
ত্বকের চুলকানি নিরাময় করতে কাজ করে। আপনার যদি অতিরিক্ত চুল পড়া বা মাথা
চুলকানি সমস্যায় ভোগেন তাহলে নিমপাতা ব্যবহার করতে পারে।
নিম পাতার বড়ি খাওয়ার উপকারিতা
নিম পাতার বড়ি খাওয়ার উপকারিতা হিসেবে আমরা প্রথমে দেখতে পাই পেটের অনেক সমস্যা জনিত কারণ ভালো করার দিন। আপনি যদি প্রতিদিন নিম পাতায় বড়ি সেবন করেন তাহলে আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি হবে। এছাড়াও আপনার পেটে কৃমি জনিত সমস্যা দূর হবে। সরাসরি ট্যাবলেট না খেয়ে নিম পাতার বড়ি খেতে পারেন।
এতে করে ঘরোয়া পদ্ধতিতে আপনার কৃমিনাশক সমস্যা সমাধান হতে পারে।এছাড়াও নিম পাতার বড়ি খেলে ক্লান্তি দূর হয় এবং কাশি কমাতে সাহায্য করে। নিম পাতার বড়ি মূত্রনালীর সংক্রমণ থেকেও মুক্তি দিয়ে থাকে। আপনার যদি উক্ত সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই প্রতিদিন একটা করে নিমপাতার বড়ি সেবন করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ মেয়েদের মাথার চুল পড়া রোধে করণীয়
নিম পাতা মুখে দিলে কি হয়
নিমপাতা তে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল থাকার জন্য আপনার ত্বকের অনেক সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। আপনার মুখে অতিরিক্ত তেল ভাব দূর করতে সাহায্য করে এছাড়াও ত্বকের লোমকূপে লুকিয়ে থাকা ময়লা বের করতে নিম পাতার গুরুত্ব অনেক। ব্রণ দূর করতে ব্ল্যাক হেডস এর মত অনেক সমস্যা এক নিমেষেই ধ্বংস করে ফেলে।
বুঝতেই পারছেন নিমপাতা মুখে দিলে আপনার মুখ সুন্দর এবং সুস্থ থাকবে। তাই আপনি নিমপাতা বেটে মুখে লাগাতে পারেন। এতে করে আপনার ত্বকের যে oily ভাবটা থাকবে সেটাও আর হবে না। আপনার প্রতিদিন ত্বকের যত্নের মধ্যে নিম পাতার ব্যবহারটা রাখবে।
ব্রণের জন্য নিম পাতার ব্যবহার
পেস্ট করা হয়ে গেলে ভালো করে মুখে মাসাজ করুন । প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট রাখার পরে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এছাড়াও নিম এবং হলুদ না ত্বকের সংক্রমণ জড়িত রোগ এবং ব্যাকটেরিয়া দূর করতে শতাধিক কাজ করবে। তাই বলা যায় ব্রণের জন্য নিম পাতার গুরুত্ব কতটুকু। আপনি চাইলে ঘরোয়া পদ্ধতিতে নিমপাতা ব্যবহার করতে পারেন।
সতর্কতা অবলম্বন
সবকিছু ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট একটা সীমা থাকে তার ওপরে আপনি যদি ব্যবহার
করতে চান তাহলে তার সাইড ইফেক্ট সৃষ্টি হবে। তেমনি কাঁচা হলুদ ও নিম
পাতার ব্যবহারের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। যেমন এরা ওষুধি কোন সম্পন্ন একটি প্রাকৃতিক
গুনাগুন আছে তেমনি এর ভয়াবহ রুপ রয়েছে। সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে আপনি
নির্দিষ্ট পরিমাণ ব্যবহার করুন।
কাঁচা হলুদ আপনি যদি খেয়ে থাকেন তাহলে অল্প পরিমাণ খাবেন। তেমনি নিমপাতা
ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনাকে সতর্কতার সহীত খেতে হবে। তবেই আপনি সুস্থ
এবং সুন্দর জীবন পাবেন।
আমাদের শেষ কথা
ঘরোয়া পদ্ধতিতে আপনি যদি কাঁচা হলুদ এবং নিম পাতার গুন গুলো পেতে চান তাহলে অবশ্যই উপরে উল্লেখিত সকল বিষয় সমূহ ভালো করে রপ্ত করুন। সঠিক নিয়ম অবলম্বনের মাধ্যমে আপনি সুস্থ এবং সুন্দর জীবন উপভোগ করতে পারেন। কাঁচা হলুদ এবং নিম পাতাকে আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রমতে মহা ঔষধ বলা হয়েছে। কারন এদের ভালো দিকটা বেশি ফুটে উঠেছে।
আপনি যদি এই কাঁচা হল এবং নিমপাতার সঠিক ব্যবহার করতে পারেন তাহলে অবশ্যই আপনার শরীরে সুফল মিলবে। আয়ুর্বেদিক একটি অন্যতম মাধ্যম চিকিৎসা ক্ষেত্রে। তাই আপনি সুস্থ থাকতে আয়ুর্বেদিক সম্মত কাঁচা হলুদ এবং নিম পাতার ব্যবহার করতে পারেন।
কিউট ফাইবারেরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url