মেয়েদের মাথার চুল পড়া রোধে করণীয়

এত যত্ন নেওয়ার পরেও চুল পড়া বন্ধ হচ্ছে না।আসল কারণ কি চুল পড়ার,আজ এই বিষয়ে চলুন জেনে নিই।মেয়েদের চুল পড়া কমন বিষয় হয়ে দাড়িছে বর্তমান অবস্থায়।চুল পড়া রোধে করণীয় কি ।

আপনার চুলের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কোন তেলের কারণে নষ্ট হচ্ছে আপনার চুল বা খাবারে ত্রুটি অসম্পন্ন আছে নাকি সব বিষয়ে আজ আলোচনা করব। নিচে চুল পড়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হলো ।

পেজ সূচিপত্রঃ

মেয়েদের অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ

মেয়েদের অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ হিসেবে কিছু শারীরিক অসুস্থতা দায়ী। যেমন- দীর্ঘমেয়াদি শারীরিকভাবে অনেকদিন অসুস্থতা, রক্তস্বল্পতা, বিভিন্ন খাদ্য উপাদানের সঠিক ভিটামিন শরীরে গ্রহণ না করা, ওজন কমে যাওয়া, হজম শক্তির ব্যাঘাত ঘটা, মানসিক ভাবে দুশ্চিন্তা বা টেনশন করা, ডায়াবেটিস থাকা, মূত্রনালীর প্রদাহ প্রধানত এগুলোর কারণে মেয়েদের অতিরিক্ত চুল পড়ে।

মেয়েদের চুল পড়া বন্ধ করার তেলের নাম

মেয়েদের চুল পড়া বন্ধ করার তেলের নাম হয়তো বা অনেকেই জানে না। জেনে থাকলেও ওই তেলটা ব্যবহার করতে চায় না। মেয়েদের চুল পড়া বন্ধ করার জন্য কদুর তেল ভালো। তাই আপনার চুল পড়া থাকলে কদুর তেলটি ব্যবহার করতে পারেন। আপনার চুল পড়া বেশি থাকলে চিকিৎসকের মতামত অনুযায়ী তেল ব্যবহার করতে পারেন। মূলত আমাদের দেশে ভেজাল তেলের জন্য চুল পড়ার পরিমাণ সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

অতিরিক্ত চুল পড়া কিসের লক্ষণ

মাথার ত্বকের রোগ যেমন-সেবোরিক ডার্মাটাইটিস, সোরিয়াসিস ইত্যাদি রোগের কারণে অতিরিক্ত চুল ঝরে। অতিরিক্ত মানসিক টেনশনে চুল পড়া বাড়িয়ে দিতে পারে। মানসিক টেনশন এর কারনে অতিরিক্ত চুল ঝরে যেতে পারে। আপনার যদি অতিরিক্ত চুল পড়ে থাকে বা চুল পড়া রোধ করতে তেল ব্যবহার করেও কোন সুফল মিলছে না।

তাহলে হতে পারে আপনার রক্তশূন্যতা ও আছে অথবা থাইরয়েডের সমস্যা আছে। এছাড়া আপনি মানসিকভাবে অসুস্থ। আপনার হয়তো বা খাদ্য অরুচি ভাব আছে। এজন্য আপনি একটি ভালো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারেন।

চুল পড়া বন্ধ করার ভিটামিন

চুল পড়া বন্ধ করার ভিটামিন এর মধ্যে রয়েছে  ভিটামিন এ ,ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি , ভিটামিন বি১২, সালফেট, জিংক এবং আইরন যা আপনার চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করবে। এছাড়া আপনি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন ক্যাপসুল ব্যবহার করতে পারেন। বাজারে যেখানে সেখানে ভিটামিন ক্যাপসুল কিনা থেকে বিরত থাকুন। বাজারে বিক্রিকৃত ক্যাপসুলে সঠিক পরিমাণের ভিটামিন ব্যবহার করা হয় না। যার ফলে চুল বেশি পড়ে।

চুল পড়া বন্ধ করার প্রাকৃতিক উপায়

চুল পড়া বন্ধ করার প্রাকৃতিক উপায় অন্যতম। চুল পড়া রোধে প্রাকৃতিক কিছু হলুদ সবজি ও ফলমূল যেমন-গাজর, পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি আলু । আপনি প্রতিদিন যদি গাজর খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরে ভিটামিন এর ঘাটতি দ্রুতই পূরণ করতে পারবে। আর ভিটামিন এ চুল পড়া রোধে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তাই প্রাকৃতিকভাবে কম সময়ের মধ্যে চুল পড়া রোধ করার জন্য অবশ্যই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় প্রাকৃতিক ভাবে পাওয়া যায় এমন কিছু এড করুন। এছাড়াও প্রাকৃতিক ভাবে তেল পাওয়া যায় এমন তেল ব্যবহার করুন।

অল্প বয়সে চুল পড়ার কারণ

অল্প বয়সে চুল পড়ার কারণ হিসাবে খাদ্য ত্রুটি বা সঠিক মত খাদ্য গ্রহণ না করা অন্যতম। অল্প বয়সী চুল পড়া মানসিক দুশ্চিন্তা, ঠিকমতো না খাওয়া, অবৈজ্ঞানিকভাবে ডায়েট, পুষ্টিহীনতা ইত্যাদি কারণে অল্প বয়সে চুল পড়ে। আপনার খাদ্য তালিকায় যদি কিছু খাবার যোগ করেন তাহলে অল্প বয়সে চুল পড়া রোধ করা সম্ভব।

চুল পড়া রোধে এমন কয়েকটি খাবার নিয়ে আলোচনা করব যা আপনার চুল পড়া রোধে শতভাগ কাজ করবে। চুল পড়া রোধে যে খাবার গুলো আপনার চুল পড়া থেকে মুক্তি দিতে পারে সেগুলা হলো

চুল পড়ার রোধে কার্যকরী খাবার সমূহ

চুল পড়া রোধে কার্যকরী খাবার সমূহ এর মধ্যে পড়ে বেশ কয়েকটি খাবার যা সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণাটি নাই মূলত আমরা প্রাকৃতিক খাবার গ্রহণের মাধ্যমে চুল পড়া নির্মূল করতে পারি। চুল পড়ার অন্যতম কারণ প্রাকৃতিক ভাবে পেয়ে থাকে এমন ভিটামিন জাতীয় খাদ্য গ্রহণ না করা। কারণ আমরা এখন ফাস্টফুড খেতেই বেশি অভ্যস্ত। তাই  চলুন আজ এই খাবার সম্পর্কে কিছু ধারনা নেই যা আপনার চুল পড়ার রোধে কাজ করবে।

আরো পড়ুনঃপুঠিয়া রাজবাড়ির ইতিহাস

বাদামঃবাদামে থাকে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট বা ওমেগা ফ্যাট সিক্স যা চুলের গোড়া সতেজ এবং লম্বা করতে সাহায্য করে। আপনার শরীর যদি ওমেগা সিক্স প্যাক না থাকে তাহলে আপনার মাথার চুল পড়ে যাওয়া, চুলের রং হালকা এবং পাতলা হয়ে যায়। এবং বাদাম বেশি খাওয়াটা ঠিক নয় যদি আপনি প্রতিদিন অল্প পরিমাণের বাদাম খেয়ে থাকেন তবে সেটা আপনার চুল পড়া রোধে কাজ করবে।

হলুদ সবজি ও ফলমূলঃহলুদ সবজি ও ফলমূল এগুলো জাতীয় খাবার আপনি গ্রহণ করলে আপনার চুল সুস্থ থাকতে পারে। এগুলো হলো পেঁপে, গাজর ,মিষ্টি আলু ,মিষ্টি কুমড়া।গাজরে ভিটামিন ‘এ’ তে ভরপুর ভিটামিন এ চুলের গোড়া ঠিকমতো কাজ করার জন্য শক্তি প্রদান করে ।আপনার চুলের যত্নে হলুদ জাতীয় সবজির গুরুত্ব একদম অপরিসীম।

ছোলাঃছোলা,এতে আছে আয়রন জিঙ্ক এবং প্রোটিন।জিংকের অভাবে আমাদের মাথার চুল পড়তে পারে। আইরন আমাদের মাথার তালুতে রক্ত সরবরাহ করে যার ফলে মাথার তালুতে অক্সিজেন পৌঁছাতে সাহায্য করে অতএব বলা যায় ছোলা আমাদের চুল পড়া রোধে বিশেষ কার্যকরী খাবার। ছোলা আমাদের শরীরে যেমন শক্তি যোগায় তেমনি চুল শক্ত করতে কাজে লাগে।

ডিমঃডিম আপনার সুন্দর চুলের জন্য বিশেষ একটা খাবার।ডিমকে আপনার টুলের বন্ধুও বলতে পারেন। এখন টিভি স্ক্রিনে প্রায় অনেক কোম্পানি চুল শক্ত করার জন্য ডিম দিয়ে অ্যাড দেখাচ্ছে। কারণ ডিম চুলের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। কেনই বা আপনার সুন্দর চুলের বন্ধ ডিম চলুন জেনে নিই।

আমাদের চুলটা পুরোপুরি প্রোটিনের তৈরি আর ডিমের প্রচুর পরিমাণে প্রোটিনে ভরপুর আমরা অনেকেই ডিম খেতে চায় না কিন্তু এই ডিম আপনার চুল পড়াকে রোধ করতে সাহায্য করে।তাই যারা ডিম খেতে পছন্দ করেন না তারা আজ থেকেই ডিম খাওয়া শুরু করুন।

ডালঃডালে আছে প্রোটিন। প্রোটিন সম্পর্কে উপরে আলোচনা করা হয়েছে। প্রোটিন আমাদের চুলের এক অটুট বন্ধন হিসেবে কাজ করে। এক কথায় প্রোটিন চুলের অতি প্রয়োজনীয় এক উপাদান।এছাড়াও ডালে আছে ভালো পরিমাণের আয়রন অতএব বুঝতে পারছেন আয়রন আমাদের শরীরে কতটুকু প্রয়োজন।

বেশি পাতলা ডাল না খেয়ে একটু ঘন করে ডাল খেলে এই পুষ্টি উপাদান বেশি পাবেন। তাই প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় অল্প ডাল যোগ করবেন। এটা আপনার চুল পড়া রোধ করা যাবে।

তৈলাক্ত মাছঃচুলের যত্নের আরেকটি বিশেষ প্রয়োজনীয় খাবার তৈলাক্ত মাছ। চুল পড়া রোধ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি খেতে হবে। তৈলাক্ত মাছের মধ্যে আমাদের দেশে পাওয়া যায় ইলিশ ,কই ,মোলা, চাপিলা মাছ এগুলো মাছে থাকে ওমেগা থ্রি ফ্যাট যা আপনার চুলকে মজবুত করতে সাহায্য করে। তাই তৈলাক্ত মাছ আপনার প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় যোগ করুন।

টক ফলঃটক ফলের মধ্যে পড়ে কমলা, মালটা, লেবু এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। যা সুন্দর চুলের জন্য ভিটামিন সি এর জুরি নেই। ভিটামিন সি এর অভাবে মূলত চুল নষ্ট হয়ে যায়। যেমন চুল ভেঙে যাওয়া, যা ভিটামিন সি এর অভাবে হয়ে থাকে।

ভিটামিন সি আমাদের শরীরে না থাকলে আয়রন শোষণ করতে পারত না। আমাদের শরীর আয়রন শোষণ না করতে পারলে তখন বেশি চুল পড়তো। অতএব আমাদের শরীরে ভিটামিন সি এবং আইরন এক সম্পন্ন জুটি।

শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার ব্যবহার করা

আমরা অনেকেই চুলে নানান ধরনের শ্যাম্পু ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু শ্যাম্পু ব্যবহার করার পর আমরা অনেকেই জানিনা যে কন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিত। কন্ডিশনার ব্যবহার না করলে আপনার চুলের যে তৈলাক্ত ভাব আছে সেটা নষ্ট করতে পারে না। আপনি আবার নতুন করে তেল ব্যবহারের উপযোগী করার জন্য অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন।

শ্যাম্পু ভালো না কন্ডিশনার

অবশ্যই আপনার চুলের জন্য শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার দুটাই একে অপরের পরিপূরক। আমরা শ্যাম্পু ব্যবহার করে থাকি চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য। আর কন্ডিশনার ব্যবহার করে থাকি চুলকে সিল্কি করার জন্য। কিন্তু শ্যাম্পু চেয়ে কন্ডিশনার শতভাগ আপনার চুলকে ড্যামেজ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। অতএব বলায় যায় শ্যাম্পু কন্ডিশনার দুটোই আপনার চুলের জন্য ভালো।

সঠিক চুলের যত্ন

চুলের সঠিক যত্ন টাই আসল ।কারণ যত্ন না নিলে কোন জিনিসই সুস্থ এবং সুন্দর হয় না। তাই সঠিক যত্নটি নিয়ে আপনার চুলকে সুন্দর এবং সুস্থ রাখতে পারেন। মূলত উপরে কন্ডিশনার এবং শ্যাম্পু নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বুঝতে পারছেন চুলের যত্নে শ্যাম্পু বা কন্ডিশনারের গুরুত্ব কতটুকু। চুলকে সুস্থ এবং সুন্দর রাখার জন্য গরম জল এড়িয়ে চলুন।

মাথায় অতিরিক্ত পরিমাণের গরম জল দিবেন না। কারণ গরম জল আপনার চুলের গোড়াকে নষ্ট করে দিতে পারে। তাই গরম জল এড়িয়ে চলুন। গোসল করার পরে আপনি চুলে বেশি পরিমাণে ঘষাঘষি বা জোরে মুছবেন না। এতে করে আপনার চুল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও মিষ্টি কুমড়ার বীজ খেলেও চুল পড়া বন্ধ হয়। মিষ্টি কুমড়ার বীজ খাবারের সাথে মিশিয়ে খেতে পারে।

চুলের যত্নে টক দই

চুলের যত্নে টক দই এর গুরুত্ব অনেক। কারণ টক দই এ থাকে ভিটামিন এ। অতএব আপনি হলুদ  সবজি বাদেও টক দইয়ে ভিটামিন এ পেতে পারেন। তাই আপনি হলুদ শাক সবজির পাশাপাশি প্রতিদিন অল্প পরিমাণের টক দই খেতে পারেন। এতে আপনার চুল পড়া অনেকটাই বন্ধ হয়ে যাবে। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে টক দই খাওয়ার নিয়ম শুরু করে দিন।

সতর্কতা

বাজারে বিক্রিত নানান ধরনের চুলে ব্যবহার করা ভিটামিন ক্যাপসুল ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। ভেজা চুল বেশি জোরে জোরে মুছবেন না। আপনার চুল শক্ত করে বাধা থেকে বিরত থাকুন। কারণ বেশি শক্ত করে চুল বাধলে চুল ড্যামেজ হয়ে যায়। যত পারেন চুল হালকা করে বাধবেন।

শেষ কথা

বর্তমানে চুল পড়া নিয়ে প্রত্যেক দেশে জনগণের মধ্যে চিন্তার বিস্তার ফেলেছে। কিন্তু ভয়ের কোন কারণ নেই।বর্তমান উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে আপনার চুল পড়া রোধ করা যায় আপনার প্রতি খাবারে যদি ঠিকমতো পুষ্টি নির্ভর বা ভিটামিন সম্পন্ন খাদ্য থাকে তবে আপনার চুল পড়া রোধে অনেক কাজে আসবে।

তাই আপনি সুস্থ থাকতে চাইলে অবশ্যই খাদ্য তালিকায় উপরে বর্ণনাকৃত খাদ্যগুলো আপনার খাদ্য তালিকায় যোগ করতে পারেন। আপনার চুলকে ভালো রাখতে চাইলে উপরের  রীতিমালাগুলো মেনে চলতে পারেন।


আরো সব তথ্য পেতে  কিউট ফাইবারের  সঙ্গে থাকুন!😍




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কিউট ফাইবারেরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url